স.স.প্রতিদিন ডেস্ক ।।
ঈদের আগেই চাঁদ দেখা নিয়ে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ফুটে উঠছে। হঠাৎ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার শাওয়ালের চাঁদ দেখা যাবে। ফলে শনিবার ঈদুল ফিতর। সমালোচনার মুখে এ বিবৃতি দেওয়ার একদিনের মাথায় সংশোধন করে নতুন আরও একটি বার্তায় আবহাওয়া অফিস বলেছে-‘শুক্রবার রাতে চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ অবশ্য চাঁদ দেখার জন্য সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কমিটি রয়েছে। কিন্তু কমিটির মতামত না নিয়েই প্রথম বার্তাটি দেওয়া হয়েছিল। তাই চাঁদ দেখা নিয়ে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর, এখতিয়ারবহির্ভূত সংবাদ পরিবেশন না করার অনুরোধ জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এছাড়া এমন সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
অপরদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চাঁদ দেখাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি আজ সন্ধ্যায় বৈঠক করবে। সন্ধ্যার আকাশে চাঁদ দেখা-না দেখা ও ঈদের দিনক্ষণ ঘোষণা দেবে ওই কমিটি। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদপ্তর যাই বলুক না কেন, আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল ঈদ। এক মাস সিয়াম সাধনার পর উদ্যাপিত হবে ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণের লক্ষ্যে আজ জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক হবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে। সভাপতিত্ব করবেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। চাঁদ দেখা গেলে কালই ঈদুল ফিতর, অন্যথায় পরশু মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল ফিতরের আনন্দে মেতে ওঠবে সন্দেহ নেই। তবে চন্দ্র মাস শুরু হওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী খালি চোখে চাঁদ দেখার শর্ত রয়েছে।
ধর্মীয় এ উৎসবকে কেন্দ্র করে আজ বিকাল থেকেই শাওয়ালের চাঁদ দেখার জন্য অগণিত মুসলিম আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। চাঁদ দেখা না গেলে পরের দিন রোববার ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের দিন আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে সবাই শামিল হবেন ঈদগাহ ময়দানে। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে মুসল্লিরা কোলাকুলি করবেন একে অপরের সঙ্গে। দোয়া ও মোনাজাত করবেন বিশ্ব মুসলিমের ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং মুসলিম জাহানের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনায়।
ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব। ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, শাসক-শাসিত ও আবালবৃদ্ধবণিতা সবার জন্য ঈদের আনন্দ যেন সমান ও ব্যাপক হয়, ইসলামে সেই ব্যবস্থা রয়েছে।
এদিকে ঈদের জন্য বুধবার থেকে ৫ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। অবশ্য শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি সরকারি ছুটির সঙ্গে এক হয়েছে। ঈদ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা পৃথক বাণীতে দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বাণীতে তারা বিশ্ব মুসলিমের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।
ঈদকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে উপাদেয় খাদ্যসামগ্রী তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সেমাই খাওয়ার ঈদ বলে প্রচলিত এ ঈদে সেমাইয়ের সঙ্গে থাকবে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, কোরমা, পোলাওসহ সুস্বাদু সব খাবার। হাসপাতাল, ও এতিমখানায় বিশেষ খাবারের আয়োজন থাকবে। সরকারি শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র এবং দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে থাকবে উন্নতমানের খাবার ও বিনোদনের ব্যবস্থা। এছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগারেও পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার।
এদিকে কাপড়চোপড়ের মার্কেটে চলছে শেষ সময়ের কেনাকাটার ধুম। শুক্রবার শেষ সময়ের ভিড় জমে উঠবে কাঁচাবাজারসহ মাংস, মুরগি, মসলা ও পোলাওর চালের দোকানগুলোতে আরও বেশি ভিড় জমে উঠবে। অপরদিকে নাড়ির টানে মানুষ ছুটছে গ্রামের পানে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ-সদস্যরাও নিজ এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করবেন। এ বছর ঈদ উপলক্ষ্যে পদ্মা সেতুতে মোটরবাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে আনন্দ আরও একধাপ বেড়েছে সাধারণ মানুষের।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিবৃতি : ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক এবং জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সদস্য সচিব বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যের বরাতে ‘ঈদের চাঁদ দেখা যাবে শুক্রবার সন্ধ্যায়’ মর্মে নিশ্চিত করে সারা দেশে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির বরাতে বলা হয়েছে, ২১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টা ২৫ থেকে ৭টা পর্যন্ত শাওয়ালের চাঁদ দেখা যাবে মর্মে বলা হয়েছে। সংবাদটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির গোচরীভূত হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, হিজরি সালের চাঁদ দেখা এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্য জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির একজন সদস্য। এ ছাড়া কমিটিতে মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং দেশের আলেম-ওলামারা সদস্য হিসাবে রয়েছেন। সারা দেশ থেকে জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে গঠিত জেলা চাঁদ দেখা কমিটির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি চাঁদ দেখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে থাকে। এ কমিটি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত। চাঁদ দেখা নিয়ে এ ধরনের অগ্রিম, বিভ্রান্তিকর এবং এখতিয়ারবহির্ভূত সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে এ ধরনের সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সর্বসাধারণের কাছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
