হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধি: পাকিস্তান সরকার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালী জাতির জন্য একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎদের একজন আ স ম আবদুর রব। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা আন্দোলন সময়কালীন লক্ষ জনতার সামনে তথাকথিত পাকিস্তানের মিলিটারী জান্তাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ডাকসু’র প্রথম নির্বাচিত ভিপি সেই সময়কার ছাত্রজনতার ঐক্যের প্রতীক আ স ম আবদুর রব।
সর্বজনবিদিত যে, পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীনতা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধে রূপান্তরের ভিত্তি রচিত হয়েছিলো। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার খলিফার অন্যতম ছিলেন আ স ম রব। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর ব্যাপক জনপ্রিয় প্রথম বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আ স ম আবদুর রব হার্টের চিকিৎসা ও নবাগতা নাত্নীর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য স্বস্ত্রীক যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুচেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনে বড় ছেলের বাসায় অবস্থান করছেন। তিনি ৯ মে ২০২১, রবিবার কাতার এয়ারলাইন্স যোগে বোস্টনে আসেন।খবর বাপসনিউজ।
গত ১৯ জুন ২০২১, শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় তিনি প্রবাসে বসবাসরত তার দলের নেতা-কর্মী ও শুভাকাংখী এবং কমিউনিটির নেতৃবৃনেদর সাথে এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভাটি দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সূভাষ চন্দ্র মজুমদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সামসু উদ্দিন আহমেদ শামীমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দলের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীসহ প্রবাসী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও অনেক শুভাকাংখীগণ অংশগ্রহণ করেন।
ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন,যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিক ফখরুল আলম, দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক প্রবাস বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিক এডভোকেট মুজিবুর রহমান,দলের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল মালেক, দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সহ-সভাপতি হেলালউদ্দিন, দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হায়দার, বাপসনিউজ এডিটর ও সিনিয়র সাংবাদিক হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র জাসদ (ইনু), সাধারন সম্পাদক নুরে আলম জিকু, সাংবাদিক ও লেখক মঈনুদ্দিন নাসের, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো থেকে এডভোকেট জসিমউদ্দিন, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী, নিউজার্সি অঙ্গরাজ্য থেকে মোহাম্মদ সারওয়ার, ম্যাসাচুচেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন থেকে বেলাল আহমদ ও সেতারা বেগম, পেনসেলভেনিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে সাংবাদিক ও লেখক জয়নাল আবেদিন, যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের লাসভেগাস থেকে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চিন্তক, লেখক ও যুক্তরাষ্ট্র মূলধারার রাজনীতির সাথে যুক্ত সিকদার গিয়াসউদ্দিন,কানাডার টরন্টো’ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া, কানাডার অটোয়া থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক, লন্ডন থেকে জেএসডি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার ফারাহ খান, ইউরোপ ভিত্তিক সংগঠন আয়েবা ও কমিউনিটি নেতা নূরুল আমিন, জার্মানী থেকে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, ফজলুর রহমান, ফ্রান্স থেকে জেএসডি সমর্থক ফোরামের অন্যতম নেতা মনচুর চৌধুরী ও হাবিবুর রহমান। সর্বশেষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সহ-সভাপতি তানিয়া রব সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং নেতার শারীরিক সুস্থ্যতা ও দীর্ঘায়ুর জন্য সকলের দোয়া কামনা করেন। সময়ের অভাবে অষ্ট্রেলিয়ার আজিজুল করিম, নিউজিল্যান্ডের আবদুল্লাহ আল হারুণ এবং সুইজারল্যান্ড থেকে আসাদুজ্জামান প্রবাসীগণের দাবীদাওয়ার প্রতি জোর দেয়ার জন্য আ স ম রবকে ধন্যবাদ জানান। মতবিনিময় সভায় সকলেই বর্ষিয়ান নেতা আ স ম রবের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করেন। উপস্থিত সকলেই মতবিনিময় সভার মূল উদ্যোগ নেয়ার জন্য নিউইয়র্কের সামসু উদ্দিন আহমেদ শামীমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
মতবিনিময় সভায় প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে আবেগতাড়িত ও গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন আ স ম রব। তিনি উদ্দ্যোক্তা ও উপস্থিত সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। একসাথে বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের সাথে ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তি ও পরবর্তি সময়ে যাঁদের সাথে যুক্ত ছিলেন ও যাঁদের হারিয়েছেন সকলকে স্মরণ করেন।
বিশ্বময় কোভিড-১৯ বিপর্যয়, বাংলাদেশে কোভিডের উর্ধ্বগতি, দেশ নিয়ে সবার উদ্বিগ্নতা, লকডাউন ও বিধিনিষেধ দিয়েও ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরী করা যায়নি বলে তিনি মনে করেন। তিনি দলগতভাবে ও রাজনৈতিকভাবে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর এবং প্রতিটি ইস্যুতে বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক ভূমিকা গ্রহণের কথা জানান। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি এখন চরম ঝূঁকিতে বলে তিনি মনে করেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে যেভাবে ব্যর্থ হচ্ছে তেমনি সক্ষমতা নষ্ট হচ্ছে সর্বোপরি আভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ছে বলে তিনি মনে করেন।
প্রবাসীগণের প্রেরিত রেমিট্যান্স, আরএমজি ও কৃষি এই তিন সেক্টরের সফলতা ধরে রাখা না গেলে এবং এই তিন সেক্টরে ঝুঁকি সৃষ্টি হলে দেশ চরম সংকটে পড়বে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন- ‘আপনাদের প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স জাতীয় অর্থনীতির প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রবাসীদের সাথে যে আচরণ, হয়রানী করা হচ্ছে তা ভয়ঙ্কর।’ রেমিট্যান্সের প্রবাহ না থাকলে ব্যাংকগুলোর বিরাট সংকটের কথা জানান তিনি। তিনি দুঃখের সাথে জানান যে, দেশ থেকে প্রতিবছর ৮০০/৯০০ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। সরকার তা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে। দেশ থেকে দানবদের পূঁজি পাচারে রমরমা অবস্থা চলছে। উন্নয়নের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদ যেভাবে লুন্ঠন ও অপচয় হচ্ছে তা বিশ্বে বিরল বলে তিনি মনে করেন। সরকারের অডিট প্রতিবেদনে ৩১ হাজার কোটি টাকা লুট করার কথা বলা হচ্ছে। সরকার যেকোন শর্তে ঋণ নিচ্ছে-বাংলাদেশের ভবিষ্যত ঋণের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে এ দায় বহন করতে হবে। প্রশাসন বিকেন্দ্রিকরণ, প্রদেশ গঠন, পার্লামেন্ট সহ সর্বক্ষেত্রে প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্ব, উপজেলা শিল্পাঞ্চল এবং যে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা আমরা চেয়েছি তা দেশের জন্য তিনি জরুরী বলে মনে করেন। তবে নৈতিকতার মাপকাঠিতে রাজনীতিকে এগিয়ে নেয়া ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিকাশে প্রবাসীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন। তিনি দোষারূপের রাজনীতি বর্জন করে জাতীয় দূর্দিনে সকলকে সম্মিলিতভাবে জাতীয় সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি দেশের সকলের কাছে দোয়া কামনা করে বক্তব্য শেষ করেন।