৭ আগস্ট চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার নওগাঁও গ্রামের এ ঘটনা। ওই স্বেচ্ছাসেবীরা হলেন রিয়াদ হাসান, রিয়াদ প্রধান, তানজীব মির্জা, মিয়া মামুন ও ইব্রাহিম পাটোয়ারী। তাঁদের বাড়ি উপজেলার নারায়ণপুর ও কালিকাপুর এলাকায়। ‘লোটাস বাড চ্যারিটি ফোরাম’ ও ‘অনির্বাণ সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশন’ নামের দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী তাঁরা। কেউ কলেজছাত্র, কেউ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কেউবা প্রবাসী। সম্প্রতি নিজেদের পকেট খরচ বাঁচিয়ে ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনেন।
গত এক মাসে এলাকার ৪০ করোনা রোগীকে বিনা মূল্যে অক্সিজেন সুবিধা দিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া ফল, ওষুধপথ্য, খাদ্য ও অর্থসহায়তাও দিয়েছেন আরও শতাধিক করোনা রোগী ও উপসর্গে থাকা লোকজনকে।
নারায়ণপুর বাজার এলাকার একটি কক্ষে অক্সিজেন সিলিন্ডার সংরক্ষণ করেন তাঁরা। সেখান থেকেই নিয়ে যান রোগীদের বাড়ি বাড়ি। শুক্রবার সকালে সেখানে কথা হয় ‘লোটাস বাড চ্যারিটি ফোরাম’–এর সভাপতি রিয়াদ হাসান ও উপদেষ্টা তানজীব মির্জার সঙ্গে। তাঁরা বলেন, উপজেলার কালিকাপুর, গোবিন্দপুর ও নারায়ণপুর গ্রামের ২০ তরুণ মিলে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ওই দুটি সংগঠন। এগুলোর সক্রিয় সদস্য শতাধিক। দুটি সংগঠনের সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন নারায়ণপুর এলাকার মিয়া মামুন।
সংগঠন দুটির তিনটি দল কার্যক্রম চালাচ্ছে। সংগঠনের কর্মীরা এ পর্যন্ত এলাকার অর্ধশতাধিক অস্ত্রোপচারের রোগীকে রক্তদান করেছেন। ৭০ জন গরিব শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ ও শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছেন। বিনা মূল্যে তিন শতাধিক লোককে শীতবস্ত্র দিয়েছেন। বৃক্ষরোপণ ও অন্যান্য কার্যক্রমও করছেন। রোগীদের অক্সিজেনের সংযোগ দেওয়ার প্রশিক্ষণও নেন স্থানীয় একটি হাসপাতালে। সিলিন্ডার ফিটিং, রোগীদের হার্টবিট পরীক্ষা ও রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা মাপারও প্রশিক্ষণ নেন। যোগাযোগের জন্য পাঁচ কর্মীর মুঠোফোন নম্বর অনলাইনে ও ব্যানারে দিয়েছেন।
‘লোটাস বাড চ্যারিটি ফোরাম’–এর কর্মী দুবাইপ্রবাসী জুয়েল সরকারের দাবি, বিদেশে থেকেও দেশের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। করোনা রোগীদের অর্থ, খাদ্য ও অক্সিজেন সহায়তায় অর্থ দিচ্ছেন। ‘অনির্বাণ সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশন’–এর সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম বলেন, অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি ঢাকায় গিয়ে আটটি সিলিন্ডার রিফিল করে শ্বাসকষ্টের রোগীদের দিচ্ছেন। মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই এটি করছেন।
বিনা মূল্যে অক্সিজেন সেবা পেয়েছেন কালিকাপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম (৫০)। তিনি বলেন, ‘করোনা অইয়া ৪ আগস্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি অই। আইসিইউতে জায়গা না পাইয়া বাড়িতে ফিরা আই। ওই দিন বিকেলে আমার তীব্র শ্বাসকষ্ট অয়। দম বন্ধ অইয়া যাইতাছিল। খবর পাইয়া তাঁরা আমার বাড়ি আইসা অক্সিজেন লাগাইয়া দেন। দুই-তিন ঘণ্টা পর অবস্থা ভালা অয়। তাঁগো জন্য দোয়া করি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ফাহমিদা হকের ভাষ্য, ওই তরুণেরা যেভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তা অনন্য। তাঁদের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.