ঢাকা March 29, 2024, 3:10 am
  1. Arts & EntertainmentCelebrities
  2. blog
  3. অন্যান্য
  4. অপরাধ
  5. আইন – আদালত
  6. আন্তর্জাতিক
  7. আবহাওয়া
  8. উপ-সম্পাদকীয়
  9. কবিতা
  10. কৃষি
  11. কৃষি ও কৃষক
  12. কৌতুক
  13. খেলা ধূলা
  14. খেলাধুলা
  15. গণমাধ্যম
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কুরবানীর বিধান: মুহাম্মাদ মাজহারুল ইসলাম

Admin
July 15, 2021 3:33 pm | 429 Views
Link Copied!

কুরবানীর বিধান

  -মুহাম্মাদ মাজহারুল ইসলাম:

কুরবানীর বিধান আল্লাহ প্রদত্ত সকল শরীয়তেই বিদ্যমান ছিল। কুরবানীর ইতিহাস ততোটাই প্রাচীন যতোটা প্রাচীন মানব অথবা ধর্মের ইতিহাস। আল্লাহ পুরস্তির কুরবানী নামক এ মহান নিদর্শন মানব জাতির প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত সকল শরীয়তেই কার্যকর ছিলো। সকল নবীর উম্মতকেই কুরবানী করতে হয়েছে। প্রত্যেক উম্মতের ইবাদতের এ ছিল একটা অপরিহার্য অংশ। আল্লাহতায়ালার এ বিধান মানব জাতির সৃষ্টি লগ্ন থেকেই কার্যকর হয়ে আসছে ।
মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাস এটাই সাক্ষ্য দেয় যে, পৃথিবীর সব জাতি ও সম্প্রদায় কোন না কোন ভাবে আল্লাহর দরবারে নিজেদের প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করে । এটাই মানুষের চিরন্তন স্বভাব বা ফিতরাত।
এ ফিতরাতের স্বীকৃতি প্রদান করে মহান আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেছন,

“আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানীর এক বিশেষ রীতি পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন তারা ওসব পশুর উপর আল্লাহর নাম নিতে পারে যে সব আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন”। { সূরা আল হজ্জ-৩৪}

পৃথিবীতে মানব সভ্যতার ইতিহাসের মতো কুরবানীর ইতিহাসও প্রাচীন। কুরবানীর বিধান ছিলো না, এমন কোনো জাতির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘আমি প্রত্যেক জাতির জন্য কুরবানী নির্ধারণ করেছি।’ [সুরা হাজ : ৩৪]। তবে যুগে যুগে কুরবানীর নিয়ম-পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন ধারায় ছিলো। হাসান বসরী (রহ.) এর মতে, সূরা আল কাওছারে বর্ণিত ‘ফাসল্লি লি রবিবকা অনহার’ অর্থাৎ ‘আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন’ আয়াতটি নাযিল করে মহান আল্লাহ তাআলা ঈদুল আযহার সালাত আদায় ও কুরবানীর নির্দেশ দান করেন। [আহকামুল কুরআন, ৩য় খন্ড, পৃ. ৪৭৫]। আল্লাহর নির্দেশে আদিষ্ট হয়ে ২য় হিজরীতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদুল আযহার সালাত আদায় ও কুরবানী করেন। সেই হতে প্রতিবছর মুসলিম উম্মাহ যথারীতি কুরবানী করে আসছে। একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে কুরবানী কী, কেন কুরবানী করতে হবে, কীভাবে কুরবানী করতে হবে, কুরবানীর শিক্ষাই-বা কী? ইত্যাদি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা আমাদের একান্ত আবশ্যক।

কুরবানী কি? ‘কুরবানী’ শব্দটির মূল অক্ষর ‘কুরব’ আরবি হলেও শব্দটি ফারসি। উর্দু, হিন্দি বাংলাসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় ব্যবহৃত হয়। যার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ করা হয়, তাই কুরবান অভিধায় অবহিত। কুরবানী শব্দটি কুরআন-হাদীসে ‘কুরবান’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে অ ‘ইয তাক্বাররবা কুরবানান ফাতুকুবিবলা মিন আহাদিহিমা ওয়ালাম ইয়ুতাক্বাববাল মিনাল আখার…’ অর্থাৎ ‘স্মরণ কর, সে সময়ের কথা, যখন তারা দু’জন (হাবিল ও কাবিল) কুরবানী করলো। তাদের একজনের কুরবানী গৃহীত হলো অপরজনের কুরবানী গৃহীত হলো না।’ কুরবানী বা কুরবান এ শব্দটি আরবি ‘কুরবুন’ মূলধাতু থেকে এসেছে। কুরবুন অর্থ নৈকট্য লাভ। তাই যে বস্তু কারো নৈকট্য লাভের উপায় হয়, সেটাকে কুরবান বা কুরবানী বলা হয়। কুরবানী শব্দটি এ অর্থেই ইবরাহীম আলাইহিস সালামের যুগ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রকৃত পক্ষে কুরবানীর তিনটি মৌলিক ও মহান উদ্দেশ্য রয়েছে।
১. আল্লাহর একত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে সারা দুনিয়ার মুসলমান কেবল মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে তাঁরই নামে এবং তাঁরই রাসূল প্রদর্শিত পন্থায় কুরবানী করে। এ সবের মাধ্যমে তারা এ কথারই সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ এক, তার কোন শরীক নেই, তিনিই সর্ব শ্রেষ্ঠ সার্বভৌমত্বের মালিক কেবল মাত্র তিনিই। তিনি ছাড়া অন্য কারো বিধান মানা যেতে পারে না। তাঁর দেয়া শরীয়তই সাফল্যের পথ আর তাঁর সন্তুষ্টি বিধানই মুক্তির চাবিকাঠি।
২. মহান আল্লাহ তায়ালার মালিকানা স্বীকার করা। অর্থাৎ সমস্ত জগতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা। তিনিই অনুগ্রহ করে আমাদের জীবন ও ধন সম্পদ দান করেছেন। আমাদের জীবন ও সম্পদের প্রকৃত মালিক তিনিই। এ জীবন ও সম্পদ তিনি আমাদের নিকট আমানত রেখেছেন। এগুলোর ব্যয় ও পরিচালনার ব্যাপারে আমি সেচ্ছাচারী হতে পারিনা। প্রকৃত মালিকের ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি অনুযায়ী এগুলোর ব্যয় ও পরিচালনা হবে। তাঁরই ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি অনুযায়ী আমার জীবন সম্পদ ব্যয় করার জন্য আমি সদা প্রস্তুত। এ প্রস্তুতির নিদর্শন স্বরূপই তাঁর নামে পশু কুরবানী করছি। পশু যবেহের সাথে সাথে তার গলদেশ থেকে যেভাবে রক্ত প্রবাহিত হয়, আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য তাঁর পথে এমনি করেই আমার বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতেও একনিষ্ঠ ভাবে প্রস্তুত।
৩. আল্লাহর নেয়ামাতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার। অর্থাৎ আমার যাবতীয় ধন-সম্পদ আল্লাহরই দেয়া নেয়ামত। এগুলো তাঁরই একান্ত অনুগ্রহ। আমার প্রতি তাঁর এ সীমাহীন অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এ সম্পদ আমি তাঁরই নামে কুরবানী করছি। আমি যে তাঁর নিকট সত্যি কৃতজ্ঞ, আমার এ কুরবানী তারই নিদর্শন।

পবিত্র কুরবানী করার সুন্নতী পদ্ধতি গুলো লক্ষ রেখে কুরবানী করতে হবে। পবিত্র কুরবানীর পশুর মাথা দক্ষিণ দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে রেখে অর্থাৎ ক্বিবলামুখী করে শোয়ায়ে পূর্ব দিক থেকে চেপে ধরতে হবে, তারপর কুরবানী করতে হবে। আর কুরবানী করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, সীনার উপরিভাগ এবং কণ্ঠনালীর মাঝামাঝি স্থানে যেন যবেহ করা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, গলাতে চারটি রগ রয়েছে, তন্মধ্যে গলার সম্মুখভাগে দুটি- খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী এবং দু’পার্শ্বে দুটি রক্তনালী। এ চারটির মধ্যে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালীর মধ্যে একটি অবশ্যই কাটতে হবে। অর্থাৎ চারটি রগ বা নালীর মধ্যে তিনটি অবশ্যই কাটতে হবে, অন্যথায় কুরবানী হবে না। যদি সম্ভব হয়, তবে ছুরি চালানোর সময় বেজোড় সংখ্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

কুরবানীর পশু যবেহ করার পূর্বে নিয়ত করতে হবে।
তার পর (بسم الله الله اكبر) বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে যবেহ করতে হবে।
যবেহ করার পর এ দোয়া পড়বে-
اللهم تقبله منى كما تقبلت من حبيبك سيدنا رسول الله صلى الله عليه وسلم وخليلك سيدنا حضرت ابراهيم عليه السلام

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা তাক্বাব্বালহু মিন্নী কামা তাক্বাব্বালতা মিন হাবীবিকা সাইয়্যিদিনা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া খলীলিকা হযরত ইবরাহীমা আলাইহিস সালাম।
যদি নিজের কুরবানী হয়, তবে منى (মিন্নী) বলতে হবে। আর যদি অন্যের কুরবানী হয়, তবে من (মিন) শব্দের পর যার বা যাদের কুরবানী, তার বা তাদের নাম উল্লেখ করতে হবে। আর যদি অন্যের সাথে শরীক হয়, তাহলে منى (মিন্নী)ও বলবে, অতঃপর من (মিন) বলে অন্যদের নাম বলতে হবে।

যেসব পশু দিয়ে কুরবানী দেয়া যাবে,
গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, দুম্বা, উট ইত্যাদি পশু কুরবানী দেয়া যাবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে এই যে, গরু, মহিষ কমপক্ষে দুই বছরের হতে হবে। ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কমপক্ষে এক বছরের হতে হবে। উট কমপক্ষে পাঁচ বছরের হতে হবে। অবশ্য ছয় মাসের ভেড়া যদি দেখতে মোটাতাজা হয় এবং এক বছর বয়সের মনে হয় তাহলে তা দিয়ে কুরবানী বৈধ।
যে পশুই কুরবানী দেয়া হোক না কেন তা হতে হবে সুস্থ ও সবল। কুরবানীর পশু চয়নের ক্ষেত্রে মনে রাখবে, এই পশুটি আল্লাহর দরবারে উপহার দেয়া হচ্ছে। তাই উৎকৃষ্ট পশু উপহার দেয়া উচিত। দুনিয়াতে আমরা কোনো উচ্চ পদাধিকারী ব্যক্তির নিকট যদি কোন উপহার পাঠাই, তাহলে সবচে’ ভাল এবং উৎকৃষ্ট জিনিসটি পাঠাই। তাহলে মহান আল্লাহর নিকট পাঠানো জিনিস কেন উৎকৃষ্ট হবে না?