বুধবার, ০৭ Jun ২০২৩, ০৭:০৮ অপরাহ্ন
মোঃ সাইদুর রহমান সাদী ॥
করোনার কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশজুড়ে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে একেবারেই সম্পর্ক নেই বলেলেই চলে। বর্তমানে তারা লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে আসক্ত হয়ে পড়ছে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও ফেসবুকে। আবার অনেকে অর্থ উপার্জনের দিকে ঝুঁকছে এ বয়েসেই। কেউ কেউ সমাজের চিহ্নিত খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশে বিভিন্ন ধরনের নেশায় আসক্ত হওয়াসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এতে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধপ্রবণতা। জন্ম হচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের মতো শক্তিশালী অপরাধ নেটওয়ার্ক। এর ফলে এদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এখন থেকেই শক্তহাতে এদের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে এদের শিক্ষাঙ্গনমুখী করা দুষ্কর হয়ে পড়বে বলে সমাজ সচেতনমহলের ধারণা। এসব কারণে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুধু শহর ও উপশহরের ছেলেমেয়ে বা শিক্ষার্থীরাই নয়, করোনার অজুহাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শহরের সঙ্গে সমানভাবে তাল মিলিয়ে গ্রাম বা পল্লী অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। অনলাইন ক্লাসের নামে শিশু থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ঝুঁকে পড়ছে মোবাইল ইন্টারনেট ও ফেসবুকে। আবার অনেকেই পড়াশোনায় ছেড়ে অলস সময় কাটাচ্ছে। এতে মানসিক ভারসাম্যহীনতার মধ্যে পড়ছে তারা। করোনার কারণে শিক্ষাব্যবস্থা একেবারে পঙ্গু হয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসের অজুহাতে শিক্ষাঙ্গন বন্ধ রাখা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু দুরন্ত শিক্ষার্থীরা মানছে রা স্বাস্থ্যবিধি। তারা রীতিমতো চুটিয়ে বন্ধুবান্ধব মিলে আড্ডা দিচ্ছে এবং মিলিত হচ্ছে মোবাইল প্রতিযোগিতা মেলায়। এমনকি তারা মাস্ক পর্যন্ত পড়ছে না। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ও নিরর্থক বলে মনে করছেন সুধীজন। দেখা যায়, গ্রামে কারো বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে পাড়া-মহল্লার ছেলেরা দল বেঁধে সেই বাড়ির পাশে বসে সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে খেলা করছে। আবার অনেককে বাজারে দেখা যায় মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে। এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে জামালপুরের বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া-মহল্লায়। তারা মোবাইল ফোন নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ১০-১২ জনে মিলে একসঙ্গে বসে বিভিন্ন গেমস কিংবা অশ্লীল ভিডিও নিয়ে মেতে ওঠে। বর্তমানে পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেমস ও আপত্তিকর ভিডিওচিত্রের দিকে তারা বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে।
শরিফুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, প্রতিদিন সকালে অফিসে যাই আর ফিরে আসি সেই সন্ধ্যায়। কোনো কোনো দিন রাতও হয়। বাসায় ছেলেকে ঠিকমতো সময় দিতে পারি না। প্রাইভেট টিউটর আসেন। তিনি একটু সময় দেন। সেই সময় ছাড়া আর কোনো সময় আমার ছেলে বই ধরে না। দিন দিন সে কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন মোবাইল আর টিভিই যেন ভরসা।
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলেন, বেশি সময় মোবাইল বা ল্যাপটপ নিয়ে মত্ত থাকলে তারা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে। এতে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে রুচিহীনতা, মোবাইল ফোন দীর্ঘ সময় দেখলে দৃষ্টিশক্তির সমস্যাও হতে পারে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.